আপনারা কেউ ১০০ শতাংশ সাক্ষর রাজ্যে’র বাসিন্দা’, কারও আবার শিক্ষা-সংস্কৃতির অহঙ্কা’রে মাটিতে পা পড়ে না! সেই জন্যই বুঝি আপনাদের দেখার চোখও এত সুন্দর! তবে কী জানেন, যে মেয়েদের জন্য আপনারা এত উতলা হয়ে উঠেছেন, তাদের কোমরে বন্দু’কের বাটের দা’গটা বোধহয় আপনাদের চোখে পড়েনি, না? পিঠে ভা’রী মে’টাল বেল্টে’র কালশি’টেও আপনাদের চোখ এড়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু মুখে নেকড়ের আঁচ’ড়ের মতো সেই দগ’দগে ক্ষতটাও কী করে চোখ এড়িয়ে গেল?
আসুন, আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিই আরও কয়েকজন কাশ্মীরি মেয়ের সঙ্গে। ওই মহিলাকে দেখছেন? খেতে কাজ করতে গিয়েছিলেন। এখন সেখানেই বিব’স্ত্র অ’বস্থায় পড়ে আছেন। বাড়িতে রয়েছে ওঁর পাঁচ বি’বাহযোগ্য ক’ন্যা। বেচারা এই অপমান সইতে পারলেন না। হাসপাতালে যাওয়ার পথেই মা’রা গেলেন! আচ্ছা, আপনি কি কারও গোঙানি শুনতে পাচ্ছেন?
ওই দেখুন, আর এক কাশ্মীরি মেয়ে! বুটের আঘা’ত আর অত্যা’চারে রক্তক্ষ’রণ ব’ন্ধ হচ্ছিল না। ওঁর পেটে ১০টি সেলাই পড়েছে। ওই যে, আর এক মেয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। বন্দুকের নলের আঘাতে জরায়ু’তে গভীর ক্ষ’ত। এখন পচতে শুরু হয়েছে। প্রাণে বাঁচতে গেলে জরা’য়ু কে’টে বাদ দিতে হবে। এই মহিলা কোনো দিন মা হতে পারবেন না।
দূরের ওই গ্রাম দু’টি দেখতে পাচ্ছেন? কুনান ও পোশপোরা। সেখান থেকেই এক রাতে ৩২ জন মেয়ে উ’ধাও হয়ে যান। দৃষ্টিহীন বৃদ্ধ বাবা কাঁদছেন! পাগলের মতো স্বামী খুঁজছেন। সন্তানদের কান্না থামানো যাচ্ছে না। কী অপরূপ দৃশ্য, তাই না? ওই যে, আর এক কাশ্মীরি ছিন্ন’ভিন্ন দে’হ পড়ে রয়েছে। তাকে করাত দিয়ে কাটা হয়েছে। ত্রেহগামের সরকারি বিদ্যালয়ের গবেষণাগারের সহকারীর কপালে আর কী-ই বা জুটত? আর ক্রালখুদের অর্চনা কিংবা শিক্ষা বিভাগের সেই নারী অধিকর্তা? পরিবারের সকলের সামনেই চলে অত্যাচার এবং শেষতক হত্যা!
গুরিহা’কার সেই মেয়ের কথা মনে আছে? ভরা পরিবারে শ্বশুর ও ননদের সঙ্গে বসেছিলেন তিনি। সকাল তখন ৯টা। বাচ্চাকে দুধ খাওয়াচ্ছিলেন। ঠিকই তখনই ভারী ‘বুট রা’স্তা থেকে উঠে এল একেবারে ঘরে। বন্দুকের নল গিয়ে ঠেকল বাচ্চা’র বুকে’। মাকে নির্দেশ মতো উঠে যেতে হল। কিছুক্ষণ পরে শোনা গেল চিৎকার। পুলও’য়ামার আহা’রবল জল’প্রপাতে কান পাতলে এখনও হয়তো সেই চিৎ’কার শোনা যাবে। কাশ্মী’রি মে’য়েরা সু’ন্দরী! শুনে দেখবেন এক বার, তাঁদের আতর্না’দও কেমন মিষ্টি!
মবিনা গনি বিয়ের পরে শ্বশুর’বাড়িই পৌঁছ’তে পারলেন না। পথেই ম’বিনা আর তাঁর মা’সির উপর হয়ে গেল অত্যাচার। ২৪ বছরের হাসিনা ক্ষত’বি’ক্ষত দেহ নিয়ে হাসপা’তালে পৌঁ’ছলেন। হাত-পা-মুখ ছিঁড়ে’খুঁড়ে একাকার। জেলা হাসপাতালে হিহামা গ্রামের সেদিন সাত মেয়ে হাজির। বিয়ের আসর ভে’ঙে গিয়েছে। নব’বধূ-সহ সবার শ’রীরে ক্ষ’ত। বিহোটায় এক মেয়েকে ছাড়াতে ২০ জন মেয়ে চার-পাঁচ ঘণ্টা আটক থাকলেন। বাকিটা ইতিহাস।
সাইদপোরা গ্রামের ১০ থেকে ৬০ বছরের মেয়ে’রাও জানতেন না, কখন কে অ’র্ডার হাতে নিয়ে এসে বলবে, ‘সা’র্চ ই’উ’। তার পরে মধ্যরাতে এসে ছিঁ’ড়ে ফেলবে কাপ’ড়। ঘরের কোনায় দাঁ’ড়িয়ে দেখবে আর এক ‘ছোট্ট মেয়ে। সেও জানবে, এক দিন এমনি করেই সার্চ অর্ডার আসবে তারও। দরজা খুলেই তৈরি হতে হবে তল্লাশির জন্য। আয়াতের মতো মুখস্থ হয়ে যাবে সেই দু’টি বাক্য‘আই হ্যাভ অর্ডার। আই হ্যা’ভ টু সা’র্চ ইউ।’ প্রতিবাদী বৃ’দ্ধার বুকে লা’থি মে’রে উল্টে ফে’লা হবে। বেঁধে ফেলা হবে তার মুখ। তার পরে সেই ভবিতব্য।
লেখক : শিক্ষিকা, রঘুনাথগঞ্জ হাইস্কুল
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা